ইজতেমা ময়দানে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩

গাজীপুর :
ইজতেমা ময়দানে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩
মাঝরাতে গাজীপুরের টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার মাঠ দখল করা নিয়ে মাওলানা সাদ ও জুবায়েরপন্থি অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে তিনজনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের প্রায় শতাধিক মুসল্লি আহত হয়েছেন।

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিব ইস্কান্দার দুইজন নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। অপরদিকে, তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বী সৈয়দ ওসিফুল ইসলাম তাদের আরও এক সাথী নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন।

নিহতরা হলেন, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া থানার এগারসিন্দু এলাকার বাচ্চু মিয়া (৭০) ও ঢাকার দক্ষিণ খানের বেড়াইদ এলাকার বেলাল (৬০)। অপরজন হলেন বগুড়ার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম (৬৫)।

ওসি হাবিব বলেন, রাতে ইজতেমা ময়দানে মারামারির ঘটনায় দুইজনের মৃত্যু খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। একজন হাসপাতালে, আরেকজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ কাজ করছে।

আহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, আ. রউফ (৫৫), মজিবুর রহমান (৫৮), আ. হান্নান (৬০), জহুরুল ইসলাম (৩৮), আরিফ (৩৪), ফয়সাল (২৮), তরিকুল (৪২), সাহেদ (৪৪), উকিল মিয়া (৫৮), পান্ত (৫৫) টঙ্গীর খোরশেদ আলম (৫০) বেলাল (৩৪), আনোয়ার (৫০), আবু বক্কর (৫৯), আরিফুল ইসলাম (৫০), আনোয়ার (২৬), আনোয়ার (৭৬), ফোরকান আহমেদ (৩৫), আ. রউফ (৫৫) মজিবুর রহমান (৫৮), আ. হান্নান (৬০), জহুরুল ইসলাম (৩৮), আরিফ (৩৪), ফয়সাল (২৮), তরিকুল (৪২), সাহেদ (৪৪)।

পুলিশ জানায়, বেশ কিছুদিন ধরেই তাবলীগ জামাতের মাওলানা সাদ অনুসারীদের জোড় ইজতেমাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। মাওলানা জুবায়ের অনুসারীরা গত ২৯ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাওলানা জুবায়ের অনুসারীরা জোড় ইজতেমা পালন করেন। এরপর ২০ ডিসেম্বর থেকে মাওলানা সাদ অনুসারীরা জোড় ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিলে তাদেরকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে ইজতেমা ময়দানে অবস্থান নেন জুবায়ের অনুসারীরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে সাদ অনুসারীদের ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ ঠেকাতে ময়দানের চারপাশে ও বিভিন্ন সড়কের মোড়ে লাঠি হাতে পাহারা বসায় জুবায়ের অনুসারীরা।

অন্যদিকে, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সাদ অনুসারীরা ইজতেমা ময়দানের উদ্দেশে বাস-ট্রাকে করে মাঠে আসতে থাকে। মধ্যরাতে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে সাদ অনুসারীদের গাড়ি আটকে দেন জুবায়েরপন্থিরা।

একপর্যায়ে রাত আড়াইটার দিকে মাওলানা সাদ অনুসারীরা ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ করলে উভয় গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় গ্রুপের দুইজন নিহত ও অন্তত অর্ধশত মুসল্লি আহত হয়েছেন। এ ঘটনার পর থেকে ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন রয়েছে।

সাদপন্থি তাবলীগ জামাতের মুরুব্বী সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম বলেন, ২০ ডিসেম্বর টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে তাদের জোড় ইজতেমা শুরুর হওয়ার কথা ছিল। মাঠ প্রস্তুতির জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মাঠের আশপাশে রাস্তার পাশে মুসল্লিরা এসে অবস্থান নিচ্ছিলেন। আমাদের এ প্রস্তুতি দেখে জোবায়েরপন্থি লোকজন বাইরে থেকে গাড়ি ভরে আমাদের লোকজনের ওপর হামলা চালায়।

এক পর্যায়ে দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয় এবং আমাদের লোকজন ইজতেমা ময়দানে ঢুকে পড়ে। সেখানে দুই গ্রুপের মধ্যে আবার ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ইজতেমা মাঠে সংঘর্ষে আহতদের টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়।

আরও খবর